পেকুয়া প্রতিনিধি :পেকুয়ায় আওয়ামী তাঁতীলীগের গ্রেনেড হামলা দিবসের সমাবেশ পন্ড হয়েছে। সদর ইউনিয়নের কলেজ গেইট চৌমুহনীতে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন তাঁতীলীগ গ্রেনেড হামলা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সমাবেশ আহবান করে।
সোমবার ২৭ আগষ্ট বিকেলে এ সমাবেশ অনুষ্টিত হওয়ার দিনক্ষন চুড়ান্ত ছিল। তবে একই স্থানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘোষনা দেয় যুবলীগের একাংশ। একই দিন এবং একই সময়ে যুবলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার একটি অংশ ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভার ডাক দেয়।
এতে করে ক্ষমতাসীন দলের দুটি সহযোগী সংগঠন মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পেকুয়ার প্রশাসন আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির শংকা দেখতে পায়। এ সময় পাল্টাপাল্টি দুটি কর্মসুচী থেকে বিরত থাকতে যুবলীগের একাংশ ও তাঁতীলীগকে নির্দেশ দেয়। ওই দিন কলেজ গেইট চৌমুহনীতে দুটি সমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও সংঘর্ষ ঠেকাতে পেকুয়া থানা পুলিশ চৌমুহনী কলেজ গেইটে পুলিশিং বলয় তৈরী করে। তাঁতীলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে সমাবেশ পন্ড হওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে।
তাঁতীলীগ নেতৃবৃন্দ জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যে সব নিস্প্রাণ শহীদ হয়েছিল আমরা তাদের স্মরনে আলোচনা সমাবেশ ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল আহবান করি।
২৭ আগস্ট আমাদের নির্ধারিত সমাবেশের দিনক্ষন চুড়ান্ত ছিল। প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। সমাবেশের অনুমতি নিয়েছি। লিখিত আবেদন স্থানীয় প্রশাসনকে প্রেরন করা হয়েছে। গত তিন দিন আগে থেকে পেকুয়ায় মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দ, পেকুয়া উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে এ সমাবেশে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রন জানিয়েছি। তবে সমাবেশের ১০ ঘন্টা আগে যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একাংশ একই স্থানে সমাবেশের ডাক দেয়। মুলত তারা তাঁতীলীগের সমাবেশ পন্ড ও প্রতিহত করতে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেয়। সমাবেশ করার মত মনমানসিকতা তাদের ছিল না। আমাদের হটাতে তারা এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত নেয়। থানায় বৈঠক হয়েছিল। এসপি সার্কেল ছিলেন বৈঠকে। আমরা তাঁতীলীগ স্পষ্ট বলে দিয়েছি শান্তিপূর্ন সমাবেশ করার এ অধিকার তাঁতীলীগ রাখে। তবে বিএনপির ইন্ধনে তাঁতীলীগের সমাবেশ পন্ড করার চক্রান্ত চলছে।
জাহাঙ্গীর যুবলীগের সভাপতি অথচ তিনি আওয়ামীলীগের সমাবেশ না হতে দেবে সেটি হতে পারে না। প্রশাসন আমাদের কথা শুনেননি। যুক্তি দাঁড় করে আমাদের নির্ধারিত সমাবেশকে পন্ড করা হয়েছে। এ দিকে পেকুয়ায় ক্ষমতাসীন দলের দুটি সহযোগী সংগঠনের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহবানকে ঘিরে আওয়ামী রাজনীতির মধ্যে হতাশাভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। পাল্টাপাল্টি সমাবেশের এ খবর উপজেলায় সর্বত্রে চাউর হয়। এ সময় আওয়ামীলীগ তৃণমুল থেকে নেতা-কর্মীরা ২৭ আগস্ট পেকুয়ার প্রধান কেন্দ্র কবির আহমদ চৌধুরী বাজার ও কলেজ গেইট চৌমুহনীতে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে ছুটছিলেন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা ভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল।
ইউনিয়ন আ’লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দরা জানায়, তাঁতীলীগের সমাবেশ ছিল আ’লীগের রাজনীতির পক্ষের সমাবেশ। অন্যদিকে যুবলীগের একাংশের সমাবেশ ছিল বিএনপির পক্ষের সমাবেশ। কলেজ গেইট চৌমুহনী বিএনপির বলয়। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদের বাড়ি এ চৌমুহনীতে। বিএনপির দুর্গ অটুট রাখতে তারা যে কোন কৌশল অবলম্বনে ব্যস্থ। আ’লীগ ক্ষমতাসীন থাকলেও চৌমুহনীতে এ দলটিকে মিটিং, মিছিল থেকে দুরে রেখেছে বিএনপি। বিএনপির সভাপতি ও সদরের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ সহ দায়িত্বশীল নেতারা যুবলীগের একাংশকে পাল্টা সমাবেশ ডাকতে প্ররোচিত করে। যুবলীগের একাংশ বিএনপির চ্যালেঞ্চ রক্ষা করেছে মুলত। বাহাদুর শাহের জেঠাত ভাইয়ের ছেলে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। দুইজন দু’রাজনীতির মেরুর হলেও দায়িত্ব ও গোপন সম্পর্ক তাদের মধ্যে অত্যন্ত সুগভীর। পেকুয়ায় বিএনপির এ কঠিন সময়ে দলটিকে নেপথ্যে থেকে উজ্জীবিত রাখছে যুবলীগের একাংশ। সালাহ উদ্দিনের বিএনপি বর্তমানে যুবলীগ সভাপতির কাঁধে ভর করছে।
জানতে চাইলে জেলা আ’লীগ সদস্য এস,এম গিয়াস উদ্দিন জানান, তাঁতীলীগের সমাবেশে আ’লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের সহমত ছিল। আসলে এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্তে আমরা বার বার বিচলিত হয়। চৌমুহনীতে বিএনপি সমাবেশ করলে বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। প্রতিহত ও পন্ড করা হচ্ছে আ’লীগের সমাবেশ। উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেম জানায়, বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে তাঁতীলীগের এ সমাবেশ পন্ড করা হয়েছে। মন্ত্রী সালাহ উদ্দিনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে আমাদের দলে থাকা কিছু মোনাফেক ও বেঈমান। প্রশাসন আ’লীগের বিপক্ষে অবস্থান করছে। বাহাদুর শাহ এ সমাবেশ পন্ড করতে প্রশাসন ও কুলাঙ্গারদের নিয়ে দফায় দফায় গোপনে বৈঠক করেছে।
মৎস্যজীবিলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জানায়, আমরা এ ধরনের হটকারীদের শাস্থি চাই। বিএনপিকে শক্তি যোগাতে এ সমাবেশ পন্ড করা হয়েছে। ছাত্রলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি কফিল উদ্দিন বাহাদুর জানান, বাহাদুর শাহের বাড়িতে সমাবেশের আগের দিন রাতে গোপন বৈঠক হয়েছিল। সেখানে যুবলীগ একাংশের সভাপতি উপস্থিত ছিল। বিএনপির লোকজনের সমন্বয়ে তাঁতীলীগের সমাবেশে আক্রমন করার মত জঘন্য সিদ্ধান্ত ছিল।
তাঁতীলীগ পেকুয়ার সম্পাদক মো: ইসমাইল জানায়, আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে আছি। সালাহ উদ্দিনের এরিয়ায় সমাবেশ না করতে যুবলীগ হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়। মুলত বাহাদুর শাহ ছিল নেপথ্যের নায়ক। সভাপতি জায়েদ মোর্শেদ জানায়, আমার বাপ দাদার ভিটায় ষ্টেডিয়াম করা হয়েছে। আমার বাবার জায়গায় তাঁতীলীগের সমাবেশ করতে দেয়নি। বাবা মুজিবাদর্শের নিবেদিত সৈনিক ছিল। জোট সরকারের সময় কি পরিমান নির্যাতিত হয়েছি মানুষ দেখেছে। সালাহ উদ্দিনের বিএনপি যার কাঁধে ভর করছে সেই আমাদের সমাবেশকে বাঞ্চাল করে দিয়েছে। নাউপেপ্র/১৮
পাঠকের মতামত: